বশির আল–মামুন, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফটিকছড়ী ও হাটহাজারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এবার প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ছয়দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল এবং ফেনী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে ওঠায় আরও কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর সীমান্তবর্তী নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে, যার ফলে নাজিরহাট, মন্দাকিনী ফরহাদাবাদ ও সুয়াবিল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
শুকনো খাবার ও উদ্ধার অভিযানে যাওয়া মিরসরাই প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি নুরুল আলম জানান, মিরসরাই এবং ফেনীতে পানিবন্দি মানুষকে সহযোগিতা এবং উদ্ধার কাজে দূর দূরান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা অনেকেই যানজটের কারণে পথে আটকে রয়েছেন।
ইছাখালী এলাকার বাসিন্দা ও ছাত্রদল নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের এলাকায় তেমন পানি ছিল না। শুক্রবার ভোর থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। এখন মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, ধুম ও ইছাখালী ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিনান্তের মধ্যে অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও বাড়ি-ঘর ফেলে যাননি অসংখ্য মানুষ। পরবর্তীতে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে এসব এলাকার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় উদ্ধার কাজে বিঘ্ন ঘটছে। এখন নতুন করে জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশ, ইছাখালী, কাটাছরা, মিঠানালা ও মঘাদিয়া ইউনিয়ন প্লাবিত হচ্ছে। দোতলায় বাড়ি ও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে শত শত মানুষ।
মিরসরাই উপজেলার বিএনপি নেতা শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, মিরসরাই উপজেলা জামায়াতের আমির নুরুল করিমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উদ্ধার ও শুকনো খাবার বিতরণ করছেন।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, পানির তীব্রতা বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এতে সংবাদ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। সেনাবাহিনী ও রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর সীমান্তবর্তী নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে, যার ফলে নাজিরহাট, মন্দাকিনী ফরহাদাবাদ ও সুয়াবিল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার রাতেই ফটিকছড়ির ২২টি ইউনিয়নের সব গ্রাম প্লাবিত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বেঁড়িবাধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে হাটহাজারীর ফরহাদাবাদের ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
ধুরং ও হালদা নদীতে পানির চাপ বাড়ায় অন্তত ১৬টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায় উল্লেখ করে স্থানীয়রা জানান, হাটহাজারীর বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যায়। ঘরবাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ফসলি জমির।
বন্যার কারণে ফটিকছড়ি থেকে হেঁয়াকো রামগড় সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে নিমজ্জিত উপজেলার মাইজভান্ডার-রাউজান সড়কও।
স্থানীয়রা জানান, ফটিকছড়ির সুন্দরপুর, ভুজপুর, বাগানবাজার ও পাইন্দং এলাকার অবস্থার বেশি অবনিত হয়েছে। এ মুহূর্তে নাজিরহাটে হালদার পানি চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের ওপর দিয়ে গড়াচ্ছে।
কানাডাপ্রবাসী ব্যবসায়ী মনজুর চৌধুরী জানান, তাদের গ্রাম মন্দাকিনী পানির নিচে। মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে। অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েছেন মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আমিন উল্লাহ বাহার চৌধুরী জানান, বাঁধ ভেঙে তাদের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি। প্রবাসী কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ফটিকছড়ির ইউএনও মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, ফটিকছড়ি দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী ও বেশ কিছু খালের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখো মানুষ।
তিনি বলেন, ‘আমরা ১৮টি ইউনিয়নের জন্য ১৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। তারা সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ আমাদের জানাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি মনিটর করছে।
‘ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় লোকজনকে আশ্রয় দিতে আমরা ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি।’
এ পরিস্থিতিতে বন্যাদুর্গতদের ইউএনওর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর (০১৭৩৩৩৩৪৩৪৮), সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের প্রধানের নম্বর (০১৭৬৯০০৯৫৯৭) এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তথা বিজিবির উদ্ধারকারী দলের প্রধানের নম্বরে (০১৬৬৯৬০১৪৩১) যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
Leave a Reply